সংস্কারের কাজ চলা কালুরঘাট সেতুতে ধাক্কা দিয়েছে একটি লাইটার জাহাজ। নোঙর করা এমভি সামুদা–১ জাহাজটির রশি ছিঁড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে সেতুর ওয়াকওয়ের র্যালিংয়ে আটকে যায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জাহাজের ধাক্কায় সেতুতে প্রথমবারের মতো নির্মিত ওয়াকওয়ে ও নিচের দুই পিলারের জয়েন্টের ক্ষয়–ক্ষতি হয়েছে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম প্রান্ত থেকে প্রবল স্রোতে জাহাজটি ভেসে এসে সেতুতে ধাক্কা দেয় এবং আটকে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত, নৌ পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) একরাম উল্লাহ ও সেতুর সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কন্ট্রাক্টরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সেতুর প্রাথমিক ক্ষয়–ক্ষতি নির্ধারণ করেন। প্রাথমিকভাবে ৫০–৬০ লাখ টাকার মতো ক্ষয়–ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সেতুর ক্ষয়–ক্ষতির ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করেছে। এদিকে নৌ পুলিশ জাহাজটি জব্দ করে সেতুর পশ্চিম পাশে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সাইট অফিসের কাছাকাছি নোঙর করে রেখেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত আজাদীকে বলেন, বাতাসে জাহাজটির রশি ছিঁড়ে নাকি চালকের ভুলে এসে সেতুতে ধাক্কা দিয়েছে সেটা নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা এসে জাহাজে কোনো নাবিক পাইনি। জাহাজের মালিকপক্ষ এখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। এর পরপরই তেলবাহী ট্রেন দোহাজারী গেছে।
নৌ পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) একরাম উল্লাহ আজাদীকে বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। জাহাজটি জব্দ করেছি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সেতুর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং নৌ পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তীব্র বাতাসে নোঙররত জাহাজটির রশি ছিঁড়ে সেতুর দক্ষিণ–পশ্চিম দিক থেকে এসে কালুরঘাট ব্রিজের মাঝখানে ধাক্কা খায়।
সেতুর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. মাহফুজ আজাদীকে বলেন, আজকে (মঙ্গলবার) নদীতে বাতাস বেশি ছিল। দুপুরের দিকে আমরা ক্রেনে করে সেতুর ওয়াকওয়েতে ঢালাইয়ের কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটি জাহাজ এসে সেতুর মাঝ বরাবর ধাক্কা দিয়ে সেতুর নিচে আটকে যায়। এতে সেতুর ওয়াকওয়ে ও নিচে দুই পিলারের সাথে জয়েন্টের কিছুটা ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে প্রচুর পরিমাণে পানি ভর্তি করে জাহাজটি নিচু করে সেতু থেকে মুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, কঙবাজার রুটে ট্রেন চালু করতে সংস্কারের জন্য গত বছরের ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে কঙবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো পথচারী পারাপারের জন্য সেতুতে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। মে মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হলে এই সেতু দিয়ে আগের মতো যানবাহন চলাচল শুরু হবে। একই সাথে ওয়াকওয়ে দিয়ে উভয় পারের পথচারীরা চলাচল করতে পারবেন
পাঠকের মতামত